সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রামে ডাক্তার পরিচয়ে পল্লী চিকিৎসক ভিজিট নিচ্ছেন ৫শ টাকা

কুড়িগ্রামে ডাক্তার পরিচয়ে পল্লী চিকিৎসক ভিজিট নিচ্ছেন ৫শ টাকা

স্বদেশ ডেস্ক:

কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার প্রায় ২৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এমবিবিএস চিকিৎসকের পাশাপাশি পল্লী চিকিৎসরাও চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্যই পল্লী চিকিৎসকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে চিকিৎসা দেন। পল্লী চিকিৎসক পরিচয়ে চিকিৎসা সেবা দেবার বিধান থাকলেও ডাক্তার পরিচয় তুলে ধরার নিয়ম নেই। কিন্তু জেলার সিংহভাগ পল্লী চিকিৎসক এ বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের প্রেসক্রিপশন প্যাডে নিজেদের ডাক্তার পরিচয় দিচ্ছেন। এমনি এক প্রতারণা ফাঁদ পেতে বসেছেন উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াইহাট বাজারের পল্লী চিকিৎসক এমএ রাজ্জাক।

তিনি ‘মানব সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ (এমএসকেএস) নামে একটি সামাজিক সংগঠনের সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসা প্রদান করছেন। তিনি নিজেকে বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সকল প্রকার চিকিৎসা প্রদান করছেন। তিনি চিকিৎসার পাশাপাশি চেম্বারে যোগ করেছেন কম্পিউটারের এনালাইসিস মেশিনের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের প্রতারণার নতুন ফাঁদ। কম্পিউটারের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করতে তিনি ভিজিট নেন ৫০০ টাকা। অথচ তার এ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকলেও চিকিৎসার নামে গ্রামের দরিদ্র মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিদিন মোটা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। চিকিৎসকের চেম্বারে সরেজমিনে দেখা যায়, একটি কক্ষে জরাজীর্ণ অবস্থায় বেশ কিছু মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধসহ রক্ত পরীক্ষার স্যাম্পল পড়ে রয়েছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা মজিবর, জব্বার ও আজম ব্যাপারিসহ অনেকেই বলেন, প্রায় বছর দুয়েক থেকে রাজ্জাক ডাক্তার কম্পিউটার দিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে থাকেন। ভিজিট নেন ৫০০ টাকা। তারা বলেন, কম্পিউটারে কি কি করে হামরা তো বুঝি না। ডাক্তার যা কয় তাই বুঝি। কিন্তু টাকাই খরচ হয় ভালো আর হয়না। ওই ফির ঘুরিয়া হাসপাতালের ডাক্তার দেখার জন্য যাওয়া লাগে। হামার গ্রামের মানুষ কাই ডাক্তার আর কাই ডাক্তার নুয়ায় সেটা কেমনে বুঝি। কোনো অফিসার বা আইনের লোকজন কোনোদিন এগলা জায়গাত আসে নাই। হামার গ্রামের মানুষের কথা কাই চিন্তা করে বাহে। সবাই সবারটা নিয়া আছে।

পল্লী চিকিৎসক এমএ রাজ্জাকের কাছে কম্পিউটারের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেবার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করেন নিয়ম নেই। তবে ব্যবসা করার জন্যই এমনটা করছেন। তবে মানুষের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, একই ইউনিয়নের যমুনা চৌমোহনী বাজারের অনুমোদনহীন কাসেম ফার্মেসিতে বসেন পল্লী চিকিৎসক শহীদুল ইসলাম। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তিনি। কেন ডাক্তার পরিচয় দেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি প্যাডে ডাক্তার লিখিনি। এটা কোম্পানির পক্ষ থেকে লিখে দিয়েছে। আর ফার্মেসির কোনো অনুমোদন আছে কীনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাইসেন্স করবো। আসলে প্রশাসনের তেমন নজরদারী না থাকায় তাই করাও হয় না। শুধু আমি না অনেকেই এমন রয়েছেন।

এছাড়াও বুড়াবুড়ি বাজারে পল্লী চিকিৎসক মাইদুল ইসলাম নিজেকে ডাক্তার পদবি সম্বলিত প্রেসক্রিপশন প্যাডে নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন। ভুয়া পরিচয়ের পাশাপাশি সরকারের অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে তিনিও ফার্মেসি দিয়ে দিব্বি চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ পল্লী চিকিৎসক বলেন, ডাক্তার পরিচয় তুলে ধরার নিয়ম নেই। কিন্তু আমরা নিজেদের ডিমান্ড বাড়ানোর জন্য করে থাকি।

এ বিষয়ে একাধিক ওষুধ কোম্পানির ম্যানেজারসহ অনেক প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পল্লী চিকিৎসকদের জন্য টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের গিফট দেয়া হয়। এজন্যই তারা এন্টিবায়োটিক ওষুধও লিখে দেন রোগীদের। আর এ গিফট দিয়ে ওষুধ লেখার জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা কাজ করে মার্কেটে।

এসব বিষয়ে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, লিখিত অভিযোগ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট করার বিধান থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে তা নেই। মোবাইল কোর্টে আমাদের প্রতিনিধি থাকে। ফলে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় মৌখিক অভিযোগ পেলেও করার কিছুই থাকে না বলে জানান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877